
তামাকবিরোধী আন্দোলনকে আমি কেবল জনস্বাস্থ্যের বিষয় হিসেবেই দেখি না, বরং একে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে দেখা উচিত। যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য এবং অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন জড়িত। তামাক মানুষের শরীরের ক্ষতির চেয়েও বড় ক্ষতি করে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায়। এই বিশ্বাস থেকেই আমি দীর্ঘদিন ধরে এই খাতে কাজ করছি, এবং সেই কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে আমার অংশগ্রহণ । আগামী ২৩-২৫ জুন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন টোবাকো কন্ট্রোল ২০২৫। এই সম্মেলনে আমি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছি একটি সম্মানিত প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে। এই দলে রয়েছেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ইয়ূথ এ্যাডভোকেটস এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সম্মিলিতভাবে আমরা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার বাস্তবতা তুলে ধরব এবং শিখব অন্যান্য দেশের অর্জন ও অভিজ্ঞতা থেকে। আমাকে এই আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়ায় আমি ডর্প-এর প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
বিশ্বজুড়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হলেও, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এখনো তামাক ব্যবহার এবং এর বিপণন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ সেই ঝুঁকির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। দেশে এখনো ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহার করে। নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার এবং তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ও হিটেড পণ্যের প্রতি আকর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে। এর পাশাপাশি কর ফাঁকি, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির (CSR) নামে তামাক কোম্পানির প্রভাব বিস্তার, এবং আইন প্রয়োগে দুর্বলতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ডাবলিন সম্মেলনের প্রতিটি আলোচনা বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী। সেখানে আলোচনা হবে করনীতি কেমন হলে তামাক ব্যবহার কমে, কিভাবে ই-সিগারেটের মতো নতুন পণ্যের বিস্তার রোধ করা যায়, কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নজরদারি বাড়ানো যায়, এবং কীভাবে তামাক কোম্পানির ভয়াবহ করাল গ্রাসকে চিহ্নিত ও প্রতিহত করা যায়। যুব নেতৃত্ব, সামাজিক আন্দোলন, এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত ভবিষ্যৎ নির্মাণ নিয়েও থাকছে দিক নির্দেশনা।
সম্মেলনের শেষ দিন ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হবে ব্লুমবার্গ ইনিশিয়েটিভের আওতায় একটি বিশেষ পার্টনার সভা, যেখানে আমি অংশ নেব বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিত্বকারীদের সঙ্গে। সেখানে বাংলাদেশের অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও কৌশল তুলে ধরার পাশাপাশি আমি শিখব অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে, যা ভবিষ্যতে আমাদের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি কাজে বড় অবদান রাখবে। দলগতভাবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ও অঙ্গীকার বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা যেমন গর্বের, তেমনি এটি দায়িত্বশীলতাও।
এই যাত্রা কেবল একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ নয় এটা বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং যুব সমাজের ভবিষ্যতের প্রতি এক অঙ্গীকার। ২০২০ সাল থেকে তামাকবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে ডর্প। এই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমি ডর্প-এর সেই অঙ্গীকারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই, যাতে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের পথে আমাদের প্রচেষ্টা আরও কার্যকর হয়। আমি ফিরবো নতুন ভাবনা, উদ্ভাবনী কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আত্মবিশ্বাস নিয়ে যা বৃহত্তর জনস্বার্থে কাজে লাগবে।